মুর্শিদাবাদ কি মুঘলস্থানের পথে? ওয়াকফের নামে কীভবে হিন্দু নির্যাতন হয়েছে? ---- ডক্টর সুমন চন্দ্র দাস
গত ২ এপ্রিল ভারতের সংসদে লোকসভা এবং ৫ এপ্রিল রাজ্যসভায় ওয়াকফ বিল পাশ হয়। এই বিলে বলা হয় ওয়কফ এখন গরীব পিছিয়ে পড়া মুসলমান এবং অনাথদের জন্য ব্যবহার হবে। সম্পত্তির বিবাদে ওয়াকফ আদালত এখন আরও সম্প্রসারিত হবে। জেলা শাসকদের বিশেষ তত্ত্বাবধানের সুযোগ দেওয়া হবে। আইনি জটিলতা এবং ওয়াকফের নামে জবর দখল বন্ধ হবে। আদিবাসীদের সম্পত্তি ওয়াকফের নামে আর দখল করা যাবে না। উল্লেখ্য পণ্ডিত নেহেরু এই আইনের বলে ওয়াকফ বোর্ডে বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছিলেন। আর তা থেকেই একদেশে একাধিক আইন এবং বিচার পদ্ধতির সূচনা হয়। মোদি সরকার এই আইনের সংশোধন করেন। কিন্তু ওয়াকফ আইনের সঙ্গে মুসলিম ভোটের বিশেষ অঙ্ক জড়িয়ে রয়েছে আর তাই তৃণমূল কংগ্রেস দেশের স্বার্থ নয় মুসলিম স্বার্থকে আগে দেখার পক্ষপাতী বেশি।
বর্তমানে ওয়আকফ বিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে আইনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এই আইনকে ঘিরে দেশের অভ্যন্তরে সিএএ-র মতো বিবভ্রান্তি ছড়িয়ে এক শ্রেণীর মুসলিম সামজের মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে হিংসাত্মাক কার্যকলাপ শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার এই আইনের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম থেকেই নিজের ভোট ব্যাঙ্কের হিসেব ঠিক রাখতে কট্টর মোল্লা মৌলবীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি নেতাজি ইন্ডোর ইস্টেডিয়াম থেকে মহাবীর জৈনের জন্মতিথিতে স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “এই রাজ্যে আইন কার্যকর হবে না। একই ভাবে আইন পাশের আগে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “মুসলমানরা যেখানে নামাজ পড়বেন ওটাই ওয়াকফ সম্পত্তি। এই সম্পত্তি কেড়ে নেবে বিজেপি।”
গোলমালের সূত্রপাত হয় গত ৮ এপ্রিল থেকেই। দিনটি ছিল শুক্রবার, জুম্মার নামাজ পরে ১০-১২ বছরের যুবকরা মুর্শিদাবাদের জাতীয় সড়ক স্থানীয় মুসলমানরা রাস্তা অবরোধ করে। জাতীয় সড়ক ১২ নম্বরের জঙ্গিপুর, ওমরপুর, সুতি, ধুলিয়ান, সাজুরমোড়, রঘুনাথগঞ্জ ইত্যাদি এলাকায় আন্দোলনের নামে দুষ্কৃতীরা ব্যাপক হাঙ্গামা করে। তারা প্রথমে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হয় এরপর রাস্তা অবরোধ করে আশেপাশের দোকান ভাঙচুর করে। বেছে বেছে হিন্দু দোকানের চলে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর। মাথায় সাদা টুপি এবং পরনে সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা এবং লুঙ্গি। মুখে তাদের নাড়ায়ে তকবির আল্লা হো আকবর ধ্বনি। শুরু হয় ইটবর্ষণ এবং চলে লাগাতার ভাঙচূর। উত্তেজিত মুসলমানরা সব থেকে বেশি অত্যাচার চালায় সামসেরগঞ্জ। পুলিশ তাণ্ডব আটকাতে গেলে তাদের উপর করে পাথার বর্ষণ। পুলিশের তিনটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। রাস্তার ট্র্যাফিক পয়েন্ট ভেঙে দেওয়া হয়। একটি অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যে আচমকা আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। একটি সরকারি বাস এনবিএসটিসিতে দুষ্কৃতীরা পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে প্রথমে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করে এরপর চলে বেছে বেছে হিন্দু বাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর। এরপর পুলিশ আক্রান্ত হয়ে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সবটাই আগে থেকে পরিকল্পনা করে করা হয়। ১০০ হিন্দু পরিবার প্রত্যক্ষ ভাবে হামলার শিকার হন। ১২ এপ্রিল ধুলিয়ানের স্টাইল বাজার নামক কাপড়ের সপিং সেন্টার লুট করা হয়। মুর্শিদাবাদ জেলার জেলা শাসক রাজশ্রী মিত্র এলাকা পরিদর্শন করেন দুইবার করে তবুও হিংসা আটকাতে ব্যর্থ হন। ধুলিয়ানে ৯টি মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় জেহাদিরা। মন্দিরগুলি হল- লালপুর কালীমন্দির, দিঘড়ী পালপাড়া মনসা মন্দির, বেতবোনা শিবমন্দির, ১৬ নম্বর ধুলিয়ান পুরসভার দাসপাড়া কালীমাতা, রতনপুর মা শীতলা মন্দির, ঘোষপাড়া দুর্গামন্দির, ছেদি পাড়া দুর্গা মন্দির, লালপুর শিবমন্দির।
সামশেরগঞ্জের জাফরাবাদ এলাকায় পরপর তিনদিন ধরে লুটপাট চালায় জেহাদিরা। পুলিশের আইসিকে ফোন করলে কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। হিন্দু এলাকায় অগ্নি সংযোগ, মারধর এবং সম্পদ লুট চালায়। কেউ কেউ নিজের জমি বেচে বাড়ি করেছিলেন সেই বাড়ি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হাতে বিড়ি বেঁধে মেয়ের বিয়ের জন্য নগদ টাকা এবং গয়না রেখেছিলেন এক পরিবার দুষ্কৃতীরা সব লুট করে নিয়ে চলে গিয়েছে। কিডনির রোগে আক্রান্ত পরিবারের রোগীকে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য ২২ লাখ টাকা জোগাড় করে রেখেছিলেন। তাও ওয়াকফ বিরোধিতার নামে দুর্বৃত্তরা লুট কিরে। কেউ কেউ বলছেন হিন্দু হওয়াই অপরাধে পরিণত হয়েছে এই বাংলায়। এই মুর্শিদাবাদ ছেড়ে ঝাড়খণ্ডে চলে গিয়েছেন অনেক পরিবার। একই ভাবে মৃৎশিল্পী বাবা হরগোবিন্দ দাস এবং ছেলে চন্দন দাসকে নির্মম ভাবে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। তাঁদের মৃত দেহে রয়েছে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। মনে হচ্ছে যেন জবাই করা হয়েছে। অনুমানিক ৫০০ পরিবার সুতি থেকে নৌকায় করে মালাদার পারলাল হাইস্কুলের অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। রূপ চাঁদ মণ্ডল মাঝির চেষ্টায় বহু হিন্দু বেঁচেছেন। দুর্যোগের নায়ক ছিলনে তিনি। মায়ের সামনে মাত্র ১৬ বছরের কন্যার কাপড় জামা খুলে নেওয়া হয়। টাইলস, মোজাইক করা হিন্দু বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ভাবে জনজীবনকে বিপর্যয় করার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল।
রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং এডিজি শামিমের কাছে কোনও খবর ছিল না এটা অযৌক্তিক। পুলিশ ঘটনার খবর পেয়েও যায়নি, তাই দায়িত্ব জ্ঞানহীন পুলিশের উপর মানুষের আশা ভরসা কীভাবে থাকে তাকে ঘিরেও প্রশ্ন উঠেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সীমান্তের ৫০ কিমি এলাকায় বিএসএফের নিয়ন্ত্রণ থাকায় সেনা বাহিনী প্রবেশ করে। পুলিশ থানা ছেড়ে পলায়ন করায় বিএসএফ প্রথমে ৫ কোম্পানি এবং পরে মোট ১৭ কোম্পানি নেমে এলাকা দখল নেয়। রুটমার্চ হলে এলাকায় কিছুটা শান্তপরিবেশ দেখা যায়। তবুও উত্তেজিত মুসলিম দুস্কৃতীদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার সেনবাহিনীকে ঘিরে ইটবর্ষণ শুরু করার চেষ্টা করে। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগের যে এলাকার মানুষ শান্তিতে ঘুমতে পারছেন না বলে অভিযোগ। ধুলিয়ানের এক ফার্নিচার ব্যবসায়ী অমর সিং জানিয়েছেন আমার দোকানের শাটার ভেঙে ২৫ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে চলে গিয়েছে। আক্রান্তদের সবাই হিন্দু আর আক্রমণকারীরা ছিলেন মুসলমান। বাজারে মুসলমান দোকানের কোনও ক্ষতি হয়নি। তাই হিন্দু ব্যবসায়ীদের মত এখন এই এলকা ছেড়ে দেবো।
হিন্দু বাড়ির মা-বোনদের তুলে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করা হয়, আক্রান্তরা নিজেদের প্রাণ বাঁচতে কোন রকমে মালদার বৈষ্ণব নগরের আশ্রায় নেন। আহত ঘরা ছাড়া মহিলারা সংবাদ মাধ্যমকে স্পষ্ট করে বলেন, “আমাদের মুসলমানরা বলছে তোদের ইজ্জত আমাদের দিয়ে দে তাহলে স্বামী সন্তানদের রক্ষা করব। হিন্দুদের এই এলাকায় থাকতে দেবো না।” মাত্র ৬ দিনের সদ্য সন্তানকে কোলে করে প্রাণ ভয়ে ছুটে আসতে দেখার সামজিক মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। নিজের ভিটে মাটি বাড়ি ঘর গরু ছাগল নিয়ে নিঃস্ব হয়ে নিজের জমিজমা ছেড়ে আশ্রয় নিতে হয় অন্যত্র। এতোদিন হিন্দু বাঙালি কেবলমাত্র বাংলাদেশ থেকে পলায়নের খবর শুনেছে এবার বাস্তব দৃশ্য মুর্শিদবাদ জেলায় স্পষ্ট রূপে দেখা গিয়েছে।
একদিকে যখন ৭, ৮, ৯ এপ্রিল ধরে উগ্র মুসলমান জনতার আগ্রাসন চলছিল ঠিক সেই সময় ১০ এপিল রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী তথা জমিয়ত উলেমা-ই হিন্দের সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরি কলকাতার মৌলালি থেকে রামলীলা ময়দান পর্যন্ত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে সভা করেন। সেখানে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, “আগে জেলাগুলিকে টাইট দবো। এরপর কলকাতায় মোট ৫০টির বেশি জায়গায় ১০ হাজার করে করে লোক জমায়েত করে গুড়, বাতাসা আর মুড়ি নিয়ে শুধু বসে থাকববো। তাতেই খবর হয়ে যাবে।” একই ভাবে আরও বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি করেছি, তিনি আশ্বাস দিয়েছনে এই রাজ্যে এই ওয়াকফ আইন কার্যকর করবেন না।”
এই মঞ্চে এমএইএমএমএইএম নেতা মুফাক্কুরুল ইসলাম উস্কানি ভাষণ দিয়ে বলেন, “আমাদের আব্বা নানাদের জন্য যে কবরস্থানের জায়গা রয়েছে এই আইনে সব কবরস্থান দখল করে নেবে বিজেপি। মুসলমানদের মসজিদ, জমিজমা অধিকার কেড়ে নেবে এই আইন। তাই আমাদের অস্তিত্ব সঙ্কটে।” উল্লেখ্য এই ভাষণ ছিল অত্যন্ত সাম্প্রদায়ক এবং ভয়ঙ্কর উস্কানি মূলক। এরপ্রভাব পড়েছে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে। যার জন্য সঙ্কটআরও মারাত্মক রূপ নিয়েছে। এই সভার প্রত্যক্ষ প্রভাবেই পরের দিন থেকে আমডাঙ্গা, আমতলা, হুগলী, ভাঙড় এলাকায় একের পরপর এক হাঙ্গামার ঘটনা ঘটে। ১৪ এপ্রিল ভাঙড়ে পুলিশের উপর সশস্ত্র হামলা হয়। গাড়ি, বাইকে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আহত হন বেশ কিছু পুলিশ।
অপর দিকে গোটা ঘটনায় রাজ্যের ডিজি রাজীব কুমার এবং এডিজিপি জাভেদ শামিম বলেছেন, “দোষীদের পাতাল থেকে খুঁজে বের করব।” কিন্তু খুব স্পষ্ট যে গত সিএএ আন্দোলনের হাজার হাজার কোটিটাকার সম্পত্তি ধ্বংস হলেও পুলিশ কোনও ভূমিকা নেয়নি। তাই অপরাধীরা গ্রেফতার হবে এটা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কি বা হতে পারে? মুখ্যমন্ত্রী ১৪ এপ্রিল কালীঘাটের স্কাইওয়াক উদ্বোধন করে একতরফা হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনও শব্দ ব্যয় করেননি। কেবলমাত্র বলেছেন “ধর্ম যার যার উৎসব সবার, সম্প্রীতি বজায় রাখুন” তাহলে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব নিয়ে কোনও পদক্ষেপ যে গ্রহণ করবেন না তা বোঝাই যাচ্ছিল। তাই দুধলে গাইদের জেলে ভরবেন তা এই বাংলার অলীক কল্পনা মাত্র।
একই ভাবে এই অত্যাচার, একতরফা আক্রমণ হামলা, অগ্নি সংযোগ, বাড়িঘর লুটপাট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেহেতু কিছু বলেন নি তাই তাঁর নগর উন্নয়ন মন্ত্রী এবং কলকাতা মেয়ের ফিরাদ হাকিম বলেছেন, “বাংলার লোকেরা বাংলা ছেড়ে বাংলাতেই আছেন। এক জেলা থেকে এক জেলায় গিয়েছেন। সংখ্যালঘুরা রাজ্যে সুখেই আছেন।” উল্লেখ্য হিন্দুদের উপর অত্যাচার নিয়ে মুখ খোলেননি। গুজরাটের সঙ্গে বাংলার তুলনা করেছেন। এই ভাবনা থেকে বোঝা যায় যে সবটাই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভা আগে থেকেই জানতেন। ওয়াকফের নামে রাজ্যের ৩০ শতাংশ ভোটকে আরও সুরক্ষিত এবং নিরাপদ করতে এই হিংসার ঘটনার পিছনে প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে।
উল্লেখ্য মুর্শিদাবাদ ছিল বাংলার মুসলমান নবাবদের রাজধানী। বাংলা বিহার ওড়িশ্যার নবাব ছিল সিরাজ-উদ-দৌলা। তাদের শাসনে ইসলাম ধর্মের ব্যাপকা প্রচার প্রসার ঘটেছিল। কিন্তু এই জেলায় ষষ্ঠ শতকের হিন্দু শৈব রাজা শশাঙ্ক কর্ণসুবর্নে রাজত্ব করেছিলেন। তাঁর আধিপত্য উত্তরে কাশী থেকে দক্ষিণে উৎকল পর্যন্ত ছিল। বাংলার পাল রাজারা আবার এই সাম্রাজ্যকে শ্রীলঙ্কা, সুমাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত করে রেখে ছিলেন। এই জেলায় রয়েছে ৫১টি সতীপীঠের একটি প্রধানপীঠ কিরীটীশ্বরী। ইতিহাস ঐতিহ্যের নিরিখে জেলার জন বিন্যাস সময় সময়ে বদলে গিয়েছে। বর্তমানে জন জনসংখ্যার বিচারে মুসলমান হল ৬৬.২৭ শতাংশ এবং হিন্দু জনসংখ্যা ৩৩.২১ শতাংশ। ১৯৪৯ সালের ১৪ অগাস্ট এই জেলার একটা অংশ পূর্ব পাকিস্তানে পড়ে গিয়েছিল সেখানে স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের পতাকা উড়ে ছিল কিন্তু ১৮ অগাস্ট ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ভারতের পাতাকা উত্তোলন হয়। এই জেলার ধুলিয়ানে গঙ্গা দ্বিবিভিক্ত হয়েছে যার একটা অংশ ভাগিরথী নাম নিয়ে বহরমপুর নাম নিয়ে নবদ্বীপ, কলকাতা হয়ে গঙ্গায় পতিত হয়েছে। অপর অংশটি পদ্মা নাম নিয়ে বাংলাদেশে রাজশাহী হয়ে মেঘনার সঙ্গে মিশে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এই জেলার নদী লাগোয়া বেশ কিছু সীমান্তে এখনও কাঁটা তার নেই। রাজশাহী হয়ে মালাদা এবং মুর্শিদাবাদ সীমান্ত অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং চোরা কারবারের একটি মুক্তাঞ্চল। সীমান্তের সেনা রাজ্য পুলিশের সঙ্গে একাধিকবার সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা এবং পদক্ষেপের দাবি করলেও রাজ্য প্রশাসনের থেকে কোনও ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। গত ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট থেকে বাংলাদেশ উত্তাল ছিল। ছাত্র আন্দোলনের কারণে হাসিনাকে দেশ থেকে বিতারিত করতে বাধ্য করা হয়। ওই দেশের একের পর জেল থেকে জঙ্গি জেহাদীদের মুক্ত করে দেয় ইউনূস প্রশাসন। একাধিক বার মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে আলকায়দা, জেএমবি, আইএসআইএস, আনসারুল বাংলা, পিএফআই, হিজবুল, লস্কর, জামাত, সিমি ইত্যাদি সংগঠনের নানা জঙ্গিদের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা গ্রেফতার করেছে। বাংলাদেশের জঙ্গিদের অনেক দিন ধরেই টার্গেট ছিল এই জেলা।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে যে এই হামলার ছক প্রায় তিন মাস আগে হয়েছে। বাংলাদেশের একাধিক জঙ্গি সংগঠন এবং স্থানীয় তৃণমূলের নেতার তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে নওদা থেকে সাজিবুল ইসলাম এবং মুস্তাকিন মণ্ডল শেখকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আন্সারুল্লা বাংলা টিম গঠনের সক্রিয় কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ২০২০ সালে আল কায়দা জঙ্গি সন্দেহে মুর্শিদাবাদ থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে পিএফআইয়ের সমাবেশ হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফরাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মণিরুল ইসলাম। মালদা এবং মুর্শিদাবাদ দুই জেলার জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে। হিন্দু সংখ্যা কমছে অপর দিকে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে। এখন গোটা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ঝাড়খণ্ডের সাংসদ নিশিকান্ত দুবে দাবি করেছিলেন মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং ঝাড়খণ্ডের একটা বড় অংশে ধর্ম ভিত্তিক জন বিন্যাস বদলে গিয়েছে। অবিলম্বে কেন্দ্র সরকার এই এলাকাকে কেন্দ্র শাসিত এলাকা ঘোষণা করে আইন শৃঙ্খলা নিজেদের হাতে নিক। এখন আগামীদিনে কেন্দ্র সরকার হিন্দু সুরক্ষা নিয়ে ঠিক কি অবস্থান নেয় তাই এখন দেখার।
ওয়াকফের নামে মুর্শিদাবাদ হিংসা নিয়ে হাইকোর্টে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এবার চাঞ্চাল্যকর তথ্য প্রকাশ হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্ট তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। এরপর হিংসাকবলিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়, তাতে স্পষ্ট বলা হয়, শুধুমাত্র বেতবোনাতেই ১১৩টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অসহায় মানুষ অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে নদী পেরিয়ে মালদায় আশ্রয় নিলে আক্রান্তদের জোর করে আবার ফেরানো হয় হিংসা কবলিত এলাকায়। রিপোর্টে আরও বলা হয়, পুলিশ নিপীড়িত মানুষকে পুলিশ চূড়ান্ত অসহযোগিতা করেছে। ঘটনায় প্রত্যক্ষ মদত দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মেহবুব আলম। হিন্দু নির্যাতনের পিছনে স্থানীয়রাই রয়েছে।
৯ এপ্রিল জঙ্গিপুরের পিডব্লুডি ময়দানে ইমাম মোয়াজ্জিন সংস্থার জমায়েত হয়েছিল। সেখানে সমর্থন করেছিল অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ ডেমোক্রেটিক রাইটস এবং সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্ট অফ ইন্ডিয়া। এই কাজ একান্ত ভাবেই প্রশাসনের মদতে হয়েছিল। বিভিন্ন সমাসেবী সংগঠনের মধ্যে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, খোলা হাওয়া, ছত্রপতি শিবাজি ওয়েল ফেয়ার ট্রাষ্ট, অধিবক্তা পরিষদ, ভারত সেবা আশ্রম, রামকৃষ্ণ মিশন পাশে দাঁড়িয়েছিল। অপরাধীদের শাস্তি হয়নি। আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের ভূ- রাজনীতি কোন পথে এগিয়ে যায় তাই এখন দেখার।
Comments
Post a Comment