"দুর্নীতি - কেলেঙ্কারি করবে বলেই হয়েছিল ভোট পরবর্তী হিংসা " ---- দেবাশিষ সরকার

 


গণতন্ত্রের পরিভাষা কেমন যেনো পরিবর্তন হয়ে যায় , সুদূর কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ঘুরে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করার পর । হবেই না কেনো বলুন যেই রাজ্য লেনিন , কার্ল মার্কস দের তথাকথিত সেকুলারিজাম, মার্কসবাদ শেখায় তাদের দেখানো আদর্শ কেই পাথেয় করে একটা চমৎকার অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ক্রমাগত অগ্রসর হয়েছি । যেইখানে থাকবে না ছাত্র দের কোনো বিদ্যভ্যাস করার চিন্তা কারণ অহেতুক বিদ্যাভ্যাস বড্ড পীড়াদায়ক তাই পঠনপাঠন বন্ধ । থাকবে না যুবক দের কোনো জীবিকা নির্বাহের চিন্তা , কারণ মসনদে বসা সমাজদরদি গোষ্ঠী নতুন পদ্ধতি প্রচলন করার চেষ্টা করছেন "বন্দুক যার মাল তার " , প্রাথমিক পর্যায়ে এই প্রকল্প প্রশংসিত ও সফল । লাগবে না কোনো , বাহ্যিক শিল্প , কারণ নিজেদের ঘরের শিল্প যেমন গরু পাচার শিল্প , কয়লা চুরি শিল্প , চাকরি চুরি শিল্প প্রভৃতি কেই আরো বৃহৎ শিল্পে পরিণত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজের ঠিকাদার ।  আর শাসক চাইছেন যুব সমাজ যেনো খুব নিপুণ ভাবে এই কাজ  করতে পারেন অতএব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র শুরু করে আরো উন্নত পরিষেবা প্রদান করতে । এহেন সুখ সমৃদ্ধি পূর্ণ রাজ্যে বেচারা গনতন্ত্র ও অগনন্তন্ত্র কে কেনো আলাদা করে দেখা হবে , কেনোই বা তাদের মধ্যে ভেদাভেদ । তাই অগণতন্ত্র কে দেদারছুট দেওয়া হোক সামনের শ্রেণীতে এগিয়ে আসার জন্যে । 



২ রা  মে ২০২১ পর থেকে বর্তমান দিন পর্যন্ত শাসক দল যে মৃত্যু তাণ্ডব ঘটিয়েছে বা চিরন্তন ভাবে ঘটাচ্ছে সেটা থেকে তো এতটা স্পষ্ট যে পশ্চিমবঙ্গে অগণতন্ত্র ছাড়া কিছুই নেই । একটা গোষ্ঠী নিজেদের শাসক মসনদে রাখার জন্যে এতটাই মশগুল হয়ে গেছে যে শত শত প্রাণ কেরে নিতে দ্বিধা বোধ করে না । ধর্ষণ , রাহাজানি যেনো একটা খেলায় পরিণত হয়েছে । ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের পর না জানি কত প্রাণ কে বলি হতে হয়েছে শাসক দলের রসাতলের কবলে পড়ে , ২ রে মে  উত্তম ঘোষ , অভিজিৎ সরকার , ৪ মে কুশ কেত্রাপাল , বিশ্বজিৎ মহেশ , অরূপ রুইদাস, ৩ রে মে শোভা রানী মণ্ডল , ১৬ মে অরিন্দম মিদ্যে  ,১৯ সে এপ্রিল পূর্ন চন্দ্র লাহা ..... এমন বহু নাম আছে যারা আর ইহলোকে নেই সবাই পদপৃষ্ট হয়েছে শাসক দলের । এরমধ্যে অনেকই আছেন যাদের কে গাছের একটা এক ইঞ্চি ডালের সাথে একটা সরু দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে আর শরীর এর ভারে হাঁটু ছুঁয়ে গেছে মাটিতে কিন্তু পুলিশ রিপোর্ট দিয়েছেন গাছে গলায় দড়ি  দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন , বারে  গণতন্ত্র এই লজ্জা লুকাবে কোথায়  । আমরা সবাই সব জানি , সব বুঝি কিন্তু বেড়ালের গলায় ভাই কে ঘণ্টা বাঁধবে ? কে চোখে চোখ রেখে বলবে " রাজা তুই উলংগ " । আমার ঘরের তো কিছু হয় নি তাই চুপটি মেরে বসে থাকো ভাই । আর এইখানেই অগণতন্ত্রর সফলতা । না জানি কত গ্রাম ফাঁকা হয়ে গেছে ভোট পরবর্তী হিংসার জন্যে ,  যার মধ্যে কিছু ফিরতে পেরেছে , কিছু আজও ফিরতে পারে নি । স্বজন পরিজন ছেড়ে নিজের ভিটা বাড়ি ছেড়ে আজ তারা বাস্তহারা যাযাবর ।

কতো বৃদ্ধ মা বাবার শেষ সম্বল তার একমাত্র সন্তান কে কেড়ে নিয়েছে , কতো মায়ের কোল খালি করে দিয়েছে । না জানি কত  দুধের শিশু গুলো তার বাবা কে হারিয়েছে , কেউ হারিয়েছে তার সিথির সিঁদুর । কি দোষ ছিল তাদের , বিরোধী  রাজনৈতিক মতাদর্শে সামিল হওয়া?  শাসক কি ফেরাতে পারবে এই প্রাণ ? পূরণ করতে পারবে এই ক্ষতি ? পারবে না । সবথেকে ভয়ঙ্কর হলো তারা আজও বিচার পেলো না । কেউ তাদের খোঁজ টুকু রাখে না । বিরোধী রাজনীতিও যেনো চরম উদাসীন । একদল মানুষ টিভি চ্যানেল গুলোতে কফি খেতে খেতে চর্চা করবেন ব্যাস দায়িত্ব শেষ । 

এই উলংগ তাণ্ডব কিন্তু আজও শেষ হয় নি , উত্তরাত্তর অগণতন্ত্রর ধূসর বাতাবরণে যেনো ছেয়ে গেছে এই রাজ্যের আকাশ , বাতাবরণ । কোথাও ঘর বন্দী করে ছোট বাচ্চা , মহিলা কে জ্যান্ত পুড়িয়ে দেওয়া , প্রকাশ্যে বোমা বাজি , আর শাসক মদতপুষ্ট গুণীজন দ্বারা রাজ্যের প্রতিটা প্রান্তে ছোট ছোট মেয়েদের ধর্ষণ করে হত্যা করা যেনো প্রতিদিনের রুটিন । 


পশ্চিমবঙ্গ কে প্রাচীন কলে সম্মান করা হতো শিক্ষার জন্যে , যে এই জাতির কিছু থাক বা না থাক পেটের মধ্যে বিদ্যা টা আছে । কিন্তু বর্তমান শাসকের দৌলতে সেটাও ধূলিসাৎ । কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্র ভর্তি থেকে শুরু করে উপাধ্যক্ষ নিয়োগ সবই দুর্নীতির চরমতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে । আদালতের নির্দেশে চাকরি খোয়াতে হচ্ছে উপাধ্যক্ষদের , আর শাসকের পুরো শিক্ষা দপ্তর টা নতুন অফিস খুলেছে আলিপুর জেলের ভেতর । এই লজ্জা কাদের ? কোলে দুধের শিশু নিয়ে অসহায় মা  গান্ধীর পাদদেশে বসে অশ্রু ঝরায় ,যুবুকেরা নিজেদের মূল্যবান সময় নস্ট করে নিজেদের প্রাপ্য আদায়ের জন্যে। আর বিদ্যালয় গুলোতে আমাদের ঘরের ছোট ছেলে মেয়েদের শিক্ষাদান , মূল্যবোধ এই সব পাঠ দিচ্ছেন তারা , যাদের নিজেদের শিক্ষা নাই , মূল্যবোধ নাই । তবু নিশ্চুপ বঙ্গ সমাজ ।

 কোনো এক দার্শনিক বলেছিলেন " একটা সমাজ কে ধংস করতে হলে পরমাণু বোমার প্রয়োজন নেই , তাদের শিক্ষা থেকে দূরে করে দাও , সম্পূর্ন সমাজ অবলুপ্ত হয়ে যাবে " । ক্রমাগত বঙ্গবাসী সেই পথেই অগ্রসর হচ্ছে ।

এই সব কিছুর দায়ভার থেকে কিন্তু আমরা পালাতে পারি না , কারণ শয়তান তার কাজটা খুব সততার সাথে করছে কিন্তু আমাদের কাজ টা আমরা করছি না । সব কিছু চোখের সামনে হতে দিচ্ছি । অন্যায় যে করে আর যে অন্যায় দেখেও চুপ করে থাকে দুই সমান দোষী । 

শুনছি ২ মে ২০২৩ শাসক দল তাণ্ডব লীলার ২ য় বর্ষপূর্তি খুব মহৎসবের সাথে পালন করবে । কারণ তাদের পরিকল্পনায় তারা সম্পূর্ণ সফল । বাংলার স্নায়ুতন্ত্রে অগণতন্ত্র ঢুকিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে যে তারা , তাই উল্লাস । জাস্টিস অভিজিৎ গাঙ্গুলির বেঞ্চ থেকে দুটো শাসকের চুরির মামলা সরে গেছে , তাই তারা কিন্তু বিবেক বোধ ,নূন্যতম লজ্জা বোধ কে বিসর্জন দিয়ে মন্তব্য করছেন যে আজ সত্যের জয় হলো । তবু আমরা বহাল তবিয়তে আছি , চিন্তা নাই ,ভাবনা নাই , যা হচ্ছে হোক । তবে চলুন আমরা সবাই পাকাপাকি ভাবে নিজেদের শেষ বেচে থাকা বিবেক , শিক্ষা , মূল্যবোধ টুকু বঙ্গোপসাগরের গণতন্ত্র কে সমেত বিসর্জন দিয়ে , শাসকের শুরু করা নতুন প্রথায় গা ভাসিয়ে দেই । রাজ্যে যখন রাজা থেকে প্রজা সবাই চোর , সবাই নীতিহীন তখন কোনো সমস্যাই থাকবে না । হীরক রাজ্যে আমরা সবাই খুশি , আমরা সবাই রাজা ।

Comments

Popular posts from this blog

মুর্শিদাবাদ কি মুঘলস্থানের পথে? ওয়াকফের নামে কীভবে হিন্দু নির্যাতন হয়েছে? ---- ডক্টর সুমন চন্দ্র দাস

"বন্দেমাতরম" প্রকাশের ১৫০ তম বর্ষে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি : ---- বিমল দাস

রাজা তোর কাপড় কোথায়? --- সুমন চন্দ্র দাস