সন্দেশখালি - এক বৈজ্ঞানিক নারী নির্যাতনের কাহিনী ------- ডা . শান্তনু বাগচি

 






পশ্চিমবঙ্গ। এক রাজনৈতীক উন্মত্ততার আতুর ঘর। এখানে আমরা আগে বৈজ্ঞানিক ভোট রিগিং দেখেছি,এক বিরাট ইতিহাস জুড়ে রয়েছে। এখন নতুন ট্রেন্ড - বৈজ্ঞানিক ধর্ষণ তিন চার বছর ধরে।

সন্দেশখালি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার একটি বিধানসভা কেন্দ্র। ২০১১ সালে তফসিলি উপজাতি এর জন্য সংরক্ষিত হয় কিন্তু পূর্বে তফসিলি জাতি এর জন্য সংরক্ষিত ছিল।

 সন্দেশ খালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহান। নিজের খেয়াল খুশি মত রাতের বেলা গ্রামের হিন্দু মেয়েদের ডেকে পাঠাতেন। না পাঠালে সে কতোটা অত্যাচারী হয়ে উঠতে পারে, তা গ্রামের মানুষ জানে। ভয়ের চোটে কাঁপতে কাঁপতে ঘরের মহিলাদের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে হতো। তারপর তাদের সাথে কি করা হতো, সেটা অনুমান করা কঠিন নয়। বছরের পর বছর অত্যাচার হওয়ার পর অবশেষে গ্রামের হিন্দু মহিলারা প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে। তারা এবার আর চুপ করে রাতের পর রাত এই নোংরামি প্রশ্রয় দেবেন না। 

এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন শাসক দলের আরেক নেতা শিবু হাজরা। মহিলাদের হাজার চিৎকার ও কান্না সত্বেও এদের পুলিশ ধরছে না। এই লেখার সময় খবর পাওয়া গেলো দীর্ঘ সংগ্রামের মুখে চাপে পড়ে ন্যাজাট থানার পুলিশ শিবু হাজরাকে গ্রেফতার করেছে। 

কিভাবে এই নির্যাতন ঘটতো? সন্ধের মুখে বাড়ী বাড়ী বার্তা পৌঁছে যেত - এই, তোর বৌটাকে আজ রাতে পাঠিয়ে দিবি। কখনোও বলতো - এই একটু ডবকা মাল পাঠা!! এনাদের স্বামীদের অবস্থা একবার ভেবে দেখুন! ঘরের স্ত্রীকে অঞ্চল প্রধানের কাছে না পাঠালে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হবে, স্বামী খুন হয়ে যাবেন। 


সন্দেশখালির ঘটনা যেন নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বাংলাকে। তবে শুধু বাংলাতেই নয়, দেশের রাজধানীতেও সন্দেশখালির ঢেউ আছড়ে পড়েছিল। এবার দিল্লিতে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেও উঠল সন্দেশখালির প্রসঙ্গ। আর সেখানেই সন্দেশখালির প্রসঙ্গ উঠে এল খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের গলায়। অমিত শাহ বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কর্মীদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে তৃণমূল। হিংসা ছড়িয়ে বিজেপি কর্মীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইন্ডিয়া জোটের দলগুলিও হিংসার রাজনীতি করছে। আর সেই ইন্ডিয়া জোটের কথা বলতে গিয়েই সন্দেশখালির ঘটনার প্রসঙ্গ তোলেন অমিত শাহ।


বিজেপির একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল যায় সন্দেশখালি। যদিও, সন্দেশখালি থেকে অনেকটা দূরেই তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। বিজেপি রাজ্যের মুখ্য বিরোধী দল। তারা সম্মানের সঙ্গে বহুল পরিমাণ ভোট পেয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করেছে। কেন্দ্রে বিজেপির সরকার। এতোটা গুরুত্বপূর্ন দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের এলাকাতে ঢুকতে দেওয়া হলো না কেন? পুলিশ কি ভয় পেয়েছে সত্য উদঘাটন হয়ে যাবে বলে? নাকি শুধুই উপরমহলের(পড়ুন রাজ্য সরকার)আদেশে বিজেপির প্রতিনিধিদের আটকে রাখা হয়েছে?

বিরোধী দলের সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সন্দেশ খালির মাটিতে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে যেতে চান। তাকে গ্রেফতার করা হয়। সুকান্ত বাবু অত্যন্ত অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও কোনমতে জেল থেকে বেরিয়ে পূজা অনুষ্ঠিত করেন। 

সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট জমা দিল জাতীয় তফসিলি কমিশন। সন্দেশখালি যান জাতীয় তফসিলি কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল। এরপরেই তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সেই রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি জানানো হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার কমিশন প্রধান অরুণ হালদারের নেতৃত্বে একটি টিম যায় সন্দেশখালি। প্রসঙ্গত, সন্দেশখালি একটি তফসিলি জনজাতি অধ্যুষিত এলাকা। এলাকায় তফসিলি জাতি মহিলাদের উপর অত্যাচার, নিপীড়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই কারণে, স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলতে যায় জাতীয় তফসিলি কমিশনের প্রতিনিধিরা।এরপরেই, একটি জাতীয় সংবাদ মাধ্যমকে কমিশনের প্রধান অরুণ হালদার জানিয়েছেন, সন্দেশখালির হিংসার ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির সুপারিশ করা হয়েছে সেই রিপোর্টে।


তফসিলি মহিলাদের উপর নির্যাতনের বিষয় নিয়ে মন্তব্য করে ইতিমধ্যেই বিতর্কে জড়িয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী। তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য, তফসিলি মহিলাদের দৈহিক গঠন, গায়ের রং দেখে চেনা যায়। অথচ সন্দেশখালিতে যে মহিলাদের সামনের সারিতে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের গায়ের রং ফর্সা। তাঁরা কি আদৌ আদিবাসী? প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল বিধায়ক। ঠিক কতোটা বর্ন বিদ্বেষ থাকলে এসব বলা যায়? এই সব লোক কি জনতার প্রতিনিধি? 

এই মন্তব্যের কড়া নিন্দা প্রকাশ করা হয় বিরোধীদের তরফে। তবে গোটা ঘটনায় সিপিএম, বিজেপির ‘চক্রান্ত’ দেখছে তৃণমূল। ঘটনপ্রবাহের মধ্যে এদিন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘লাগাতার ধর্ষণের কুৎসা চলছে। যদি আদৌ কিছু হয়ে থাকত দিনের পর দিন, সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস স্থানীয় নেতারা আগে বলেননি কেন? কেন মিডিয়াতেও কোনো অভিযোগ ছিল না? শুধু মুখের কথার নাটক।’ 

কুণাল ঘোষের নাটকের চাইতে বড় নাটক কিছু আছে? একবার বলেন নারদা সারদার পিছনে মুখ্য মন্ত্রী, জেল থেকে ছাড়া পেতেই ভিন্ন রূপ। তখন রাজ্য সরকারের পদলেহন শুরু। নাটক তো উনি করছেন। 


এদিকে আবার আরেক মোচড়!! সন্দেশখালির সিপিআইএমের প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে রবিবার গ্রেফতার করেছে সন্দেশখালি থানার পুলিশ। সন্দেশখালি থানা ও বাঁশদ্রোণী থানা যৌথ উদ্যোগে এদিন নিরাপদ সর্দারের বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সন্দেশখালির গ্রামবাসীদের ‘উস্কানি’ দিয়ে আন্দোলন করিয়েছেন এই নিরাপদ সর্দারই। শিবু হাজরা যে, ১১৭ জনের নামে অভিযোগ করেছিলেন, সেই অভিযোগের এক নম্বরেই নাম ছিল এই নিরাপদ সর্দারের। আর নিরাপদকে গ্রেফতারের সাথে সাথেই মাঠে নেমে পড়ে সিপিএম। বামফ্রন্ট এমন একটা ভাব করে আছে, যেন তারা হিন্দু পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চান। এটা সাময়িক রাজনীতি ছাড়া কিছু না। বামপন্থী দলগুলো এটাকে ফিরে আসার একটা চেষ্টা হিসেবেই দেখছে, এতে কোন সন্দেহ নেই। 


সন্ত্রাসের ভূমি সন্দেশখালিতে মায়ের কোল থেকে শিশুকে ছিনিয়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলার অভিযোগ উঠল। জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন পুলিশের কাছ থেকে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট চাওয়ার পরেই আজ সন্দেশখালিতে পৌঁছল রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। চেয়ারপার্সন তুলিকা দাসের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের দল কথা বলেন স্থানীয়দের সঙ্গে। শিশুকে ছুড়ে ফেলার অভিযোগ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি, সন্দেশখালিতে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কীভাবে হচ্ছে, পরীক্ষার্থীদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন জানিয়েছে।

‘রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হোক পশ্চিমবঙ্গে।’ সন্দেশখালি ঘুরে এমনটাই পর্যবেক্ষণ জাতীয় তফসিলি কমিশনের। বৃহস্পতিবারই জাতীয় তফসিলি কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল, সন্দেশখালি পরিদর্শনে যায়। গ্রামের উৎপীড়িত মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। এর পরেই রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট জমা দেন তাঁরা।


শাজাহানের সাজা হবে কিনা জানিনা। কারণ ভোটের স্বার্থে শাসক দল তাদের তোয়াজ করে থাকেন। তাদের সাত খুন মাফ। এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভাবে একটা বিষয় স্বীকার করতেই হবে যে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু মা বোনদের কোনোই ইজ্জৎ নেই। তাদের সুরক্ষা কিছুই নেই। এটা সম্মিলিত ভাবে হিন্দুদেরকে মুছে দেওয়ার একান্ত প্রচেষ্টা নয় কি? পুরো রাজ্যের ডেমোগ্রফি উল্টে পাল্টে যাচ্ছে, আমরা তবু নীরব। শাসক দলের পোষা বুদ্ধিজীবীরা মুখে তালা লাগিয়ে বসে থাকেন। তাদের কাছে এসব ছোট্ট ব্যাপার। এনিয়ে মাথা ঘামানোর কি দরকার? 

যারাই প্রতিবাদে মুখর হচ্ছে, তাদের ফেসবুক আইডি তে রিপোর্ট মেরে প্রফাইল উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সবই শাসক দলের সৌজন্য! মুখ খুলে প্রতিবাদ করার লোক কয়জন? 

শাহজাহান কোন্ আদর্শ মেনে চলার জন্য প্রতি রাতে নারী সাপ্লাই চাইতো? এটাই কি শাসক দলের আদর্শ? মহিলারা আজও মুখের ঘোমটা খুলতে ভয় পাচ্ছেন। চারদিকে সন্ত্রাসের রাজত্ব। মহিলা মুখ্য মন্ত্রী নারী হয়েও এই লজ্জাজনক ঘটনায় বিশেষ মুখ খোলেননি। শাহজাহান কে সুরক্ষা দিয়েই চলেছেন। 

হায়রে গণতন্ত্র!! এই রাজ্যে তোর জায়গা নেই। একটা গোটা জাতির সঙ্কট চলছে। বিরোধী দলের কোন সেনসিটিভ জায়গায় যাওয়ার অধিকার নেই। এভাবেই কি ঘোমটার আড়ালে খেমটা নাচিয়ে যাবে সরকারের ছেলেরা? অবশ্য তাদের নেত্রী তো বলেই দিয়েছেন - ছেলেরা তো একটু দুষ্টুমি করবেই। 

তাহলে আরোও দুষ্টুমির অপেক্ষা করুন। দেখুন আর কত শাহজাহান বের হয়ে আসে।

Comments

Popular posts from this blog

মুর্শিদাবাদ কি মুঘলস্থানের পথে? ওয়াকফের নামে কীভবে হিন্দু নির্যাতন হয়েছে? ---- ডক্টর সুমন চন্দ্র দাস

"বন্দেমাতরম" প্রকাশের ১৫০ তম বর্ষে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি : ---- বিমল দাস

রাজা তোর কাপড় কোথায়? --- সুমন চন্দ্র দাস